টাকা ছাড়া জীবন ভয়ংকর অ-সুন্দর! শুধু টাকার কাছে হেরে যায় সকালের রাজসিক ঘুম, বিকেলের মাঠে খেলা, প্রিয় মানুষের বিয়ে, বন্ধুত্বের আবদার, বাবার চিকিৎসা, মায়ের ছেড়া শাড়ি, নিজের শখ- আহ্লাদ! ভালো থাকার স্বপ্ন! টাকা জীবন নয়! তবে টাকা ছাড়া একটা জীবন ভয়ংকর অসুন্দর, অপ্রাপ্তির, অসহায়ত্বের, দীর্ঘস্বাস লুকিয়ে বেঁচে থাকার!
Monday, December 16, 2024
Sunday, December 15, 2024
হুমায়ূন আহমেদের ‘অপেক্ষা’ উপন্যাস: গভীর অনুভূতি আর জীবনের গল্প
হুমায়ূন আহমেদ: এক অনবদ্য কথাশিল্পী
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কিংবন্দি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ তার লেখা অসংখ্য উপন্যাস, নাটক এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাঙালির হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে গেছেন। তার লেখায় জীবনের প্রতিটি অনুভূতি এবং সম্পর্কের জটিলতা চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। তার মধ্যে একটি অবিস্মরণীয় সৃষ্টি হল ‘অপেক্ষা’ উপন্যাস।
---
‘অপেক্ষা’ উপন্যাসের পটভূমি
হুমায়ূন আহমেদের ‘অপেক্ষা’ উপন্যাসে জীবনের ছোট ছোট সম্পর্কের জটিলতা এবং মানুষ একে অপরের প্রতি যে গভীর অনুভূতি লালন করে তা গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। উপন্যাসের মূল থিম হল অপেক্ষা, একটি জীবনদায়ী অনুভূতি, যা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানুষ অনুভব করে। চরিত্রগুলোর জীবন ও তাদের একে অপরের প্রতি অনুভূতিগুলি পাঠককে নিজের জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
---
চরিত্রায়ন ও গল্পের গভীরতা
হুমায়ূন আহমেদের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার চরিত্র গঠন। এখানে প্রতিটি চরিত্র এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যা তাদের মানবিকতা এবং জীবনের বাস্তবতা প্রতিফলিত করে। অপেক্ষা করো উপন্যাসের চরিত্রগুলি একে অপরের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনে, ভালোবাসায়, বিরহে এবং একাকিত্বে নিজেকে খুঁজে পায়।
---
উপন্যাসের ভাষা ও লেখনীর জাদু
হুমায়ূন আহমেদের সহজ ভাষা এবং স্বাভাবিক বর্ণনা পাঠককে গল্পের গভীরে টেনে নিয়ে যায়। তার লেখায় কখনোই জটিলতা নেই, বরং জীবনের সোজাসাপ্টা অনুভূতিগুলোই মূখ্য হয়ে ওঠে। ‘অপেক্ষা’-এ জীবনের প্রতিটি দুঃখ, হাসি, কান্না ও সম্পর্কের মাধুর্য ভাষায় এবং দৃশ্যপটে ফুটে উঠেছে।
---
উপন্যাসের বিশেষত্ব
‘অপেক্ষা’ শুধুমাত্র একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি জীবনের একটি অপূরণীয় খোঁজ। লেখক পাঠককে দেখিয়েছেন যে, জীবনে কখনো কখনো অপেক্ষা মানুষের সবচেয়ে বড় অনুভূতি হয়ে দাঁড়ায়। এটি আমাদের শিখায় যে, অপেক্ষা কখনোই বৃথা যায় না। জীবনযাত্রার মূল অনুভূতি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাস।
---
উপসংহার
‘অপেক্ষা’ এক মর্মস্পর্শী উপন্যাস, যা জীবনের গভীরতা এবং সম্পর্কের জটিলতা উপস্থাপন করে। এই উপন্যাসটি একটি অসাধারণ সাহিত্যকীর্তি যা মানবিক সম্পর্কের গভীরতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে। এটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, বরং একটি জীবন দর্শন, যা আমাদের জীবনের আসল সত্যগুলো উপলব্ধি করতে সহায়ক।
অজানা পথে অপেক্ষা
মাঝরাতে একলা ফেরা পথিক হয়ে থেকে যাবো বাকি কটা দিন। থেকে যেও সাথে তীব্র যন্ত্রণায় আর অল্প ভালোবাসায়। কিছু শব্দ ছুড়ে ফিরবো সেথা একলা হয়েই। কখনো আকাশ জুড়ে নামবে বৃষ্টি, অল্প ভেজা পথ দিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুল, হাঁটবে না হয় অন্য কারো সাথে সে প্রহরে! তুমি যেও আমার সাথে আয়ু রেখা ধরে। একটু এগিয়ে, ফিরো তোমার নিজ ঘরে। খোলা জানালার ওপাশে ঘন নীল আকাশ অপেক্ষায় আমার। মৃদু স্বরে ডাকে আমায়। কখনো বা পাঠায় বেনামি চিঠি– হাহাকারে পূর্ণ।
কফিন পাঠায় গোলাপ, শেষ কান্না দিচ্ছে বিদায়। যাচ্ছে চলে অসীম অজানায়। কথারা গেছে ফুরিয়ে। চারদিকে বোবা আবেশ। অনেক কিছু আছে জমে, সময় তো গিয়েছে ফুরিয়ে। আসছে নতুন প্রহর। আধার চিরে কিছু বাদে আসছে নতুন ভোরের আলো। আমি যাচ্ছি নতুন কোনো স্বপ্নের নগরীতে। অল্প অল্প করে ফুরিয়ে এসেছে সময় ডালের পাতা! অপেক্ষায় তবু তোমার – হয়তো আসবে! অল্প ভাঙা গল্প গুলো রয়ে যাবে সে আঁধারে তোমার আড়ালে।
আমার সে অবুঝ পেনসিল আজও তোমায় লিখে, বোকা বোকা ইচ্ছেরা তোমায় ঘিরে ডানা মেলে।
Rohan Khan (কাব্য)
Saturday, December 14, 2024
অতী
- *দেখা*
হঠাৎ, এক বর্ষার দিনে দেখা অতন্দ্রিলার সাথে। আবার সেই মুগ্ধতার বাতাস যেন হৃদয় ছুঁয়ে গেলে আলতো করে। কিছু বলার পেলাম না। দুর থেকে পরখ করে দেখলাম শুধু!
আচ্ছা সে কি আমায় আজও মনে রেখেছে। কতো বছরই তো কেটেছে জীবনের নিয়মে!
বাস স্ট্যান্ডের ছাউনিতে দুইজনেই আছি। অথচ এক সময়ের অতিপরিচিত মানুষ দুই আজকে বোধয় সব চেয়ে বেশি অপরিচিত।
যাক সে কথা, সেই কখন থেকে মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে, একটু থামার নাম নিচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চমকিয়ে মেঘের গুড়গুড় শব্দে আশেপাশের বর্ষণকে একটা ভীতি দিচ্ছে।
খুব করে মন চাইছে, অতীন্দ্রিলার সাথে একটা বার এতো বছরের অভিমান ভেঙে কথা বলি। হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠে নিজের নাম শুনলাম! অথচ এই নামে আমাকে কেউই এ শহরে চেনে না।
পাশ ফিরতেই দেখি, অতন্দ্রিলা। অবাক হলাম—তার মানে সেও আমাকে দেখেছে এতক্ষণ।
বাবাই না , কেমন আছিস?
তার সেই মায়াবী চোখে চোখ পড়তেই আমি বোধয় রয়ে গেলাম সুদূর অতীতের ঠিকানায়। বুঝলাম না কী উত্তর দেবো। মাথা নাড়ালাম জাস্ট।
"কোথায় চলে গেছিলি? অনেকবার ট্রাই করেছি কথা বলার জন্য। সব কিছুতে অথচ কোত্থাও পাইনি। পাঁচ বছর হয়ে গেছে বাবাই!"
ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে বললাম, " তখন থেকে আমি অধিকার হারিয়েছিলাম। তাই আর বিরক্ত করিনি। বাদ দে ওসব কথা! এখন বল কেমন আছিস? বিয়ের দিন আমি এসেছিলাম। দুর থেকে দেখেছিলাম তোকে। কী অপরূপ লাগছিল তোকে সেটা যদি একবার তুই নিজে বুঝতি!"
"রাখ তোর এসব কথা! এত বছর কোথায় ছিলি?"
"আমি আছি আমি ছিলাম —এই যান্ত্রিক শহরের অহেতুক সব না বলা , না লেখা গল্পের লাইনে। "
এতক্ষণে বোধয় মেঘের কান্না আরো বেশি করে পেল। বর্ষণ থামার নাম গন্ধ নেই। শীতল বাতাস বইছে। কী এক অদ্ভুত পরিবেশ, অথচ বিষন্ন শহর।
সে চুপ রইলো। আর কথা বললো না। আমারও সাহস হলো না তেমন কিছু বলার। এদিকে সিগারেটের নেশাটা ইতোমধ্যে চেপেছে। বুক পকেটে অন্তিম সিগারেটটা মুখে নিলাম। আঙুলের ফাকে সিগারেট চেপে বললাম, " জানিস! আমি এই বিধাতার রঙে রাঙিয়ে দেওয়া এক অস্পষ্ট মানুষ। যাকে চেনার সাধ্য কারোর নেই।"
থেমে কথা ঘুরিয়ে বললাম, " আচ্ছা, সে কি করে?"
গভীর ভাবনা থেকে হুট করে বেরিয়ে," হ্যা! ওঃ! আছে একটা জব করে।"
"বাহ! বাবু হয়েছে?"
"হুম! ওকেই নিতে এসেছিলাম। অথচ এই অকাল বৃষ্টিতে এখানে .....!"
আনন্দের ছাপ নিয়ে উৎসুক হয়ে বললাম, "তাই নাকি? আচ্ছা, ছেলে নাকি মেয়ে?"
"মেয়ে"
"বাহ বেশ। তার নাম কি রেখেছিস?"
"মাইশা"
অতন্দ্রিলা আমার পছন্দের নামই রেখেছে ওর মেয়ের। তার মানে কি ও আজও আমায়.....
ইতোমধ্যে, এই এলোমেলো বৃষ্টি ছেড়েছে। টুপটাপ করে যা পড়ছে তাতে বাস স্ট্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া মানুষ গুলো যেতে শুরু করেছে। মেঘ তখনও মুখ ভার করে আছে।
বললাম, "বৃষ্টি ছেড়েছে! আজকে তাহলে আসি!"
"বিয়ে করেছিস?"
বললাম, " বিয়ের জন্য কিছুই বাকি নেই। ফালতু একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে কি করতাম। তাই এখন নিজের মতো চলি,। খাই দাই আর ঘুরি"
"ও আচ্ছা। আচ্ছা — তোর কন্ট্রাক্ট নাম্বার টা দেওয়া যাবে?"
......................
2. *স্বপ্ন*
অতন্দ্রিলার কথা সেই বিকাল থেকে মনের একোনা ওকোনা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বুঝছি না কি করব। কাজেও মন লাগছে না।এরই মধ্যে হঠাৎ কারেন্ট গেল। ল্যাপটপের আলো আমার মুখের ওপর পড়ছে। বছর পাঁচেক পর আবার সেই অদ্ভুত মুগ্ধতাকে উপলব্ধি করলাম আজ। জানালার সামনে ল্যাপটপ খোলা রেখেই, কনুই মুড়ে মাথা টেবিলে রেখে কী যেন ভাবছি। জানি না......
আবার বৃষ্টি নামলো বাইরে! অথচ আমার রুমের ভেতরে গুমোট ভাবটার তীব্রতা যেন ক্রমশই বাড়ছে।
তখনই মনে পড়লো রবীন্দ্রসঙ্গীত,
"এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না,
শুধু সুখ চলে যায় — এ মনে মায়ার ছলনা ...."
আসলেই ঠিকই তো আমি সুখের জন্যই অতন্দ্রিলাকে সামান্য ভালো থাকার জন্যই ভালোবেসেছিলাম, অথচ জীবন থেকে ভালো লাগা আর ভালো থাকা দুটোই বিদায় নিয়েছে। যা হোক, এখন ওকে নিয়ে ভাববার অধিকার আমার নেই। না আছে ওকে ভালোবাসার অধিকার। ও এখন অন্যকারোর।
সব ভাবনা ছেড়ে সবে কাজে মন দিয়েছি। ওদিকে বৃষ্টি হয়েই চলেছে বিরামহীন। এরই মধ্যে, ফোনের কর্কশ শব্দে কনসেন্ট্রেশন ব্রেক হলো। আননোন নাম্বার! কিন্তু এই রাতে কেই বা কল দিবে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, ঠিক ১১ টা ২৮। রিসিভ করলাম না। আবার কল!
এবার রিসিভ করতেই ওপর প্রান্ত থেকে মেয়েলি কন্ঠে সালাম ভেসে এলো। জবাব দিলাম। অথচ ঠিক চিনে উঠতে পারলাম না.......
কে বলছেন?
তোর অতী!
অতন্দ্রিলা?
হ্যাঁ...
এরপর বেশ অনেকক্ষণ নিরবতা। পাশ থেকে কোনোই কথা নেই, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে অথচ ঘরের ভেতরে বিরক্তিকর নিরবতা! ওর কথার অপেক্ষায় থেকে এপাশে ল্যাপটপ শাট ডাউন দিলাম। নিরবতা ভেঙে,
আজও ভুল বুঝে আছিস বাবাই আমায়?
কোই না তো! এখানে আবার ভুল বুঝাবুঝির কী আছে? তবে বোধয় এখন এই রাত আমার সাথে কথা বলা নিয়ে তোকে কেউ ভুল বুঝলেও বুঝতে পারে। So,বলি কী ঘুমা!
কে ভুল বুঝবে?
কে আবার তোর হাসবেন্ড! আচ্ছা রাখ, কাল ভোরে উঠে অনেক কাজ করতে হবে। পরশু আমার ফ্লাইট!
মানে? কোথায় যাচ্ছিস?
ওঃ তোকে বলাই হয়নি! আমি আগামী পরশুই রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। আজকে মূলত এরই কিছু কাজ করে ফিরছিলাম। তখনই ভাগ্যের পরিণতি তোর সাথে দেখা।
আমার কথার পর কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না। হঠাৎ আবার নামলো গুমোট নিরবতা। মিনিট চারেক পর হঠাৎ এমন মনে হলো যেন অতী ফুঁফিয়ে উঠেছে!
নীরবতাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বললাম,
কী হলো? কিছু বলবি। আচ্ছা জানিস, এই যে দেশ ছাড়া অনেকটা স্বপ্ন ছিল আমার। অবশেষে অনেক বাঁধা পেরিয়ে আগামী পরশু যাচ্ছি চলে!
ও ধীরে বললো, একবার যাওয়ার আগে দেখা করবি কাল একটু! আমিই আসবো, তুই বল কোথায় পাবো তোকে, কষ্ট করে আসতে হবে না তোর। এরপর না হলে আর কখনই দেখা হবে আমাদের...
চুপ করে রইলাম। ওর এমন কথা আমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেলো, প্রায় বছর সাতেক পেছনে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত টাইম ট্রাভেল কেউ না করলেও, আজকের দিনে আমি এত বার করেছি যে- আলবার্ট আইনস্টাইনের থিওরি সত্যিই সেটা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে! তবে সেটা বস্তু জগতের জন্য, আমি করেছি কাল্পনিক জগতে। অতী এমন ভাবে আগেও অনেকবার জোর করেছে। প্রত্যেকবার না বলেছি, তবে না যেয়ে থাকতে পারিনি। বললাম,
আচ্ছা! ঠিক আছে।
আর কোনো কথা হলো না। এদিকে সব কিছু গোছগাছ শেষ। কিন্তু আবহাওয়া যদি এমন থাকে তাহলে আগামী পরশুর ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়েও যেতে পারে!
..............................
3. *আক্ষেপ*
ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই ল্যান্ড করবে ইউটাইয়ার ২০৪ ভনুকোভো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এ....
অবশেষে ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে পা রাখলাম অন্য এক মাটিতে। এয়ারপোর্ট থেকে ট্রেন জার্নির জন্য প্রস্তুত হলাম।
মস্কোতে পৌঁছাতে খানিকটা সময় লাগবে। মস্কোতে পৌঁছানোর পর নিহান আর আমি বেলারুশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিবো। বেশি একসাইটেড এই কারণে নিহানের সাথে আমার দেখা হবে ছয় বছর আট মাস পর। অতন্দ্রিলার বিয়ের আগেই ও এখানে চলে আসে। দেশে থাকতে আমরা চার জনের একটা বেশ ভালো বন্ডিং ছিল। এখন আমি — নিহান মস্কোতে। অতন্দ্রিলা আছে সংসার আর বাবু নিয়ে। আর সামিন দু বছর হলো বাইক এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে। অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের অথচ সব মৃত্যুর কাছে হেরে গেছে।
সন্ধ্যা ছয়টা মস্কোতে পৌঁছালাম। স্টেশনে আমার অপেক্ষায় ছিল নিহান। ছয় বছর পর আবার একসাথে হলাম। একটা সময় ছিল যখন রেগুলার বিকালে সাইকেল চালিয়ে, নদীর ধারে গিয়ে বসতাম — ঘণ্টা কতক আড্ডা চলতো। অথচ এরপরই জীবন সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।
তিন বছর হলো নিহানের বাবা মারা যাবার। মাও বেশ অসুস্থ। বিয়ে যাকে করেছিল, সেও ধোঁকা দিয়েছে। ডিপ্রেশনের ভেতর দিয়ে গিয়েছে একটা বছর ওর.......
অনেক কথা বন্দী আছে, অবশেষে সেগুলো মুক্তি একে ওপরের কাছে। বের হলাম,
আমি চারদিক চোখ বুলিয়ে দেখছি, ওপাশে নিহান ট্যাক্সি ঠিক করছে।
........
নিহানের বাসাটা বেশ অনেকটা দূরে। যেতে যেতে বেশ অনেক রাত হয়েছে। বাসায় ফেরার পর ল্যাগেজ খোলার সময় চোখে পড়লো অতিন্দ্রিলার দেওয়া একটা গিফট বক্স। সেদিন বলেছিল, "এটা ওখানে পৌঁছানোর পর খুলবি!" এতক্ষণে মনে পড়লো। বেশ টায়ার্ড তাই আর দেখার ইচ্ছে হলো না। আবার পরশুদিনই বেলারুশের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে! অত্যন্ত ব্যস্ততা.....
__________________
শেষ মেষ বেলারুশে পৌঁছালাম, বিকাল তিনটা বেজে আঠাস মিনিট! চারদিকে শুভ্র বরফ, মাঝ দিয়ে পিচ করা মসৃণ রাস্তা। নিহানকে একটা ব্রুহাম নিতে বললাম। কারণ, এখানকার ব্রুহাম গাড়ি গুলো দেখতে অসাধারণ। দুয়েকটা ব্রুহাম দেখা যায়—তবে যান্ত্রিকতায় সেসব প্রায় বিলুপ্ত।
পিচের ওপর দিয়ে টগবগিয়ে ব্রুহাম চলছে। বেশ লাগছে—
কিছুক্ষণের ভেতরে সূর্যাস্ত যাবে। লাল সূর্য পশ্চিম আকাশের কোণে ঢলে পড়েছে....!
নিহানকে বললাম, "মনে আছে এমন সময় আমি অতন্দ্রিলাকে কি বলতাম?
আজ আবার মনে পড়ছে সেগুলো—
"তুমি শেষ বিকেলের পশ্চিম আকাশের কোণে জমা মেঘের মতই রক্তিম বিষন্ন সুন্দর..
তুমি কাঠফাটা রোদ্দুরে হঠাৎ নামা প্রেমের বৃষ্টি..
তুমি শ্রাবণ মেঘের আড়ালে ক্লান্ত আবছা সূর্য...
তুমি প্রানবন্ত, তুমি আমার অব্যক্ত কাব্য...!"
নিহান চুপ রইলো— কিছু বললে না। এবার অতী দেওয়া গিফট বক্সটা খুললাম ব্রুহামে বসেই।
একটা ছোট কাগজে মোড়া কিছু আর তার সাথে একটা চিঠি। লেখা ছিল—
বাবাই,
শেষ দিন কী বলেছিলি মনে আছে? তুই বলেছিলি," আচ্ছা পারলে ভালো থাকিস।" তোর কথাটার অর্থ সেদিন কী আর বুঝেছিলাম? বুঝেছিলাম যেদিন এক মুহুর্ত ভালো থাকার জন্যও– হাহাকার করেছি। জানি আমায় ক্ষমা করে দিলে তোর নিজের প্রতি অবিচার করা হবে। তাই ক্ষমা চাইবো না।
তবে— তোকে দেওয়া আমার আঘাতে আজ আমি ভীষন ক্লান্ত। আরিফ ( আমার স্বামী ) ছমাস আগে সুইসাইড করছে। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওকে ডাকছিলাম। তবে ও ওঠেনি আর। ওর শীতল শরীর স্পর্শ করে আমি অবিশ্বাসে ছিলাম, অথচ এই অপ্রস্তুত সত্য।
ও মারা যাওয়ার আগে সুইসাইড নোট ছেড়ে গিয়েছিল। যেটা ওর নিথর ঠাণ্ডা দেহের কাছেই পড়ে ছিল। লেখা ছিল — " অতন্দ্রিলা, বাবুকে কখনোই বলবে না, তার বাবা তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বিশ্বাস করো আমি, আমি এভাবে ছেড়ে যেতে চাইনি। তবে আর পারলাম না। অনেক কিছু তোমাকে বলবার সময় পাইনি। হয়তো পারতামও না। তোমরা ভালো থেকো!" — (আরিফ)
কোনো মতে জীবনটা নিয়ে বেঁচে আছি। কোথায় যাবো জানি না। আমাকে কেমন জানি সবাই কোণঠাসা করে দিয়েছে।কয়েকবার তো মনে হয়েছে আমিও মারা যাই। মাইশার মুখের দিকে চেয়ে আর পারিনি। জানিস তোকে তো পাইনি, তাই তোর পছন্দের নামই আমার নিজের মেয়েকে দিয়েছি। বাবুর কয়েকটা ছবি দিলাম। আর তুই যখন এটা পড়ছিস, চাইলেও আর দেখা হবে না। আল্লাহ্ হাফিজ!
ইতি
অতী
পাশের ছোট মোড়কে ছিল — ফুটফুটে একটা মেয়ে। চোখ বন্ধ করলাম— ভেতরে কোনো এক ঝড় বইতে শুরু করলো। দিন চারেকের মধ্যে সব স্বপ্ন যেন আবার মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে লাগল। বুঝিনি......জানি সে আমার না ...! তাকে নিয়ে লেখা আমার সব গল্প নিছক কল্পনা মাত্র।
এলোপাথাড়ি ঘোড়ার খুরের আওয়াজে আবার অতীতের কোনো এক অজানা শহরে নরক যন্ত্রণায় ডুবে গেলাম।
জীবনের এসব ক্লান্তিকর সমস্ত শীতল যুদ্ধ ফেরিয়ে আমার শুধু অতন্দ্রিলার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। অথচ ফেরার পথ বহু আগেই বন্ধ হয়েছে।
হঠাৎ মনে পড়লো শেষের কবিতা,
“কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ!”
আজ সত্যিই আমার বিষন্ন আকাশ জুড়ে নেমেছে বিষাদের নীল। চাইছি আবার ফিরতে ওই মৃত অতীতে। তবু কোথায় সে অবকাশ। জীবনানন্দের সেই লাইন ফিরলো বোধয় নতুন রূপে আমার কাছে,
“পৃথিবী একবার পায় তারে, পায়নাকো আর”
শেষ সন্ধ্যায়
শুদ্ধতম নব কবি রূপে আবির্ভাব ঘটেছিল সেদিন আমার। প্রথম বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছিল ঈশান কোণে জমা কালো মেঘ। তোমাকে নিয়েই প্রথম লিখেছিলাম, নস্টালজিক কবিতা। একে একে লিখেছিলাম, দুশো বায়ান্নটা অভিন্ন চিঠি। যার কোনোটাই পোস্ট অফিস অবধি যেতে পারেনি।
আমার কাছে ছোটখাটো বিষয় গুলোতেও ছিল দারুন পাগলামী, আমার পাগামীরা প্রায়ই যেতো ইচ্ছের মিছিলে তোমাকে পাওয়ার জন্য।
মানি প্ল্যান্টের মতো দেয়াল ঘেঁষে আঁকড়ে উঠেছিল সে প্রেম আমার করিডোরে। গন্ধরাজের মতো মুগ্ধকর গন্ধের ফুটে ছিল অকৃত্রিম স্বপ্ন জীবন নিয়ে।
স্বপ্ন জয়ের দারুন প্রচেষ্টাও ছিল। অথচ তুমি তো লেখা ছিলে অন্যের নামের পাশে। হয়তো আমার নামের পাশে তুমি নামটা শূন্যস্থান হয়ে থাকবে। হেরে গেছিল নিয়তির কাছে কিছু স্বপ্ন। কিছু ইচ্ছেরা ধুলো চাপা পড়ে ছিল নিতান্তই ব্যস্ত শহরের বুকে।
এক স্টেশনের জনমানব শূন্য প্ল্যাটফর্মে আমি নিঃসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। তুমি তুমুল বেগে ছোটা শেষ ট্রেনে ফিরেছ স্বপ্নের শহরে। রেখে গেছো এক অতীতে ভরা স্যুটকেস।
হয়তো তুমি নিত্য নতুন চিঠি লেখো, গান গাও প্রাণ ভরে । আমি অতীত নামক অদ্ভুত খাঁচায় বন্দী হয়ে ফেলে আসা কাজলের দিন রাত্রি নিয়ে বেঁচে আছি। আমি অদ্ভুত অন্ধকার টানেলের শেষ প্রান্ত খুঁজে চলেছি...!
জানো, রং তুলির আঁচড়ে একসময় যে মুক্ত নীল আকাশের বুকে স্বপ্ন আঁকতাম। এখন ওই রং তুলির হাতে পায় ধরেও কিছুই আসে না আঁকব বলে। কালো রঙের সমাহার চারদিকে। শুভ্রতা বিধায় নিয়েছে শরতের সাথে।
একদিন যে হৃদয়ের মাঝে সবুজ পাহাড় সমান বিশ্বাস ছিল, সে হৃদয় এখন ক্যান্সারের জীবাণুর দখলে । অনাগত শিশুর মৃত্যুর মতো আমার সব ইচ্ছেরা চিরো বিদায় নিলো। তারপর আর রঙিন ঘুড়ি উড়ানো হয়নি নীল আকাশ আর শুভ্র মেঘের মাঝে।
শ্রাবণের স্নিগ্ধ বৃষ্টিতে আর ভিজতে দেইনি তারপর থেকে। বসন্তে আর কোকিল ডাকেনি। শুধু গ্রীষ্ম এসেছে কাঠফাটা রোদ্দুর নিয়ে। প্রেমের বৃষ্টি বিদায় নিয়েছে ধরা থেকে.....
তাই বারবার জীবনানন্দের একটা কথা মনে পড়ে,
" পৃথিবী একবার পায় তারে,
পায় নাকো আর ...!"
Rohan Khan (কাব্য)
অপ্রত্যাশিত
টাকা ছাড়া জীবন ভয়ংকর অ-সুন্দর! শুধু টাকার কাছে হেরে যায় সকালের রাজসিক ঘুম, বিকেলের মাঠে খেলা, প্রিয় মানুষের বিয়ে, বন্ধুত্বের আবদার, বাবার চ...
-
টাকা ছাড়া জীবন ভয়ংকর অ-সুন্দর! শুধু টাকার কাছে হেরে যায় সকালের রাজসিক ঘুম, বিকেলের মাঠে খেলা, প্রিয় মানুষের বিয়ে, বন্ধুত্বের আবদার, বাবার চ...
-
শুদ্ধতম নব কবি রূপে আবির্ভাব ঘটেছিল সেদিন আমার। প্রথম বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছিল ঈশান কোণে জমা কালো মেঘ। তোমাকে নিয়েই প্রথম লিখেছিলাম, নস্...
-
হুমায়ূন আহমেদ: এক অনবদ্য কথাশিল্পী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কিংবন্দি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ তার লেখা অসংখ্য উপন্যাস, নাটক এবং চলচ্চিত্রে...




